চাঁদপুরে পৌরসভার বিভিন্ন সড়কে নিম্নমানের ইট-রাবিশ ও সরঞ্জাম ব্যবহার করে দায়সারা নির্মাণ কাজ চলছে। এতে করে পৌরবাসীর মধ্যে মারাত্বক ক্ষোভ ও চাপা উত্তেজনা বিরাজ করতে দেখা যাচ্ছে।
পৌরসভায় দীর্ঘ বছর পরে বেশ কয়েকটি সড়ক মেরামত করা হলেও এ কাজ মান সম্মত হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে বেহাল অবস্থায় পরিণত হয়েছে এসব সড়ক। এ কাজটি এত নিন্মমানের যে কেহ সরোজমিনে স্বচোঁখে তা’না দেখলে তাকে বুঝানো যাবেনা।
গত এক বছর আগে পুরো শহরজুড়ে রাস্তা এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থার সংস্কার কাজ শুরু হলেও আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আত্মগোপনে চলে যান পৌর মেয়র মো: জিল্লুর রহমান জুয়েল। ফলে বন্ধ হয়ে যায় পৌরসভার বিভিন্ন সড়ক উন্নয়ন কাজগুলো।
তবে প্রশাসক নিয়োগের পর শুরু হয়েছে থেমে যাওয়া সড়কগুলোর নির্মাণ কাজ। কিন্তু এই কাজের মান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন পৌরবাসী। তারা শুরু হওয়া সড়ক নির্মাণ কাজের সঠিক মান বজায় রাখার দাবি জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার(১৯ সেপ্টেম্বর) শহরের আব্দুল করিম পাটওয়ারী সড়ক ও পুরাণ বাজার থেকে দোকানঘর পর্যন্ত সড়কে নির্মাণ কাজ চলতে দেখা গেছে। এসব সড়কের নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত ইটের খোয়াসহ নির্মাণ সামগ্রীগুলো একেবারে নিম্নমানের বলে অনেকে প্রকাশ্যে অভিযোগ তুলেন।
শহরের নতুন বাজার এলাকার বাসিন্দা জুবায়ের আলম বলেন, ‘শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক হচ্ছে বাসস্ট্যান্ড থেকে শপথ চত্বর পর্যন্ত। এই সড়কের কাজ দীর্ঘদিন পরে শুরু হয়েছে। তবে নির্মাণ কাজে যেসব সামগ্রী ব্যবহার হচ্ছে তা খুবই নিম্নমানের। আমার দাবি হচ্ছে এই সড়কের নির্মাণ কাজ যেন মান সম্মতভাবে করা হয়।’
এদিকে শহরের পুরান বাজার লোহারপুল থেকে দোকানঘর পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু হয় দুই সপ্তাহ আগে। তবে টানা বৃষ্টি থাকায় ওই কাজটি অনেকটা ব্যাহত হয়েছে। ওই সড়কের কাজেও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করতে দেখা গেছে।
চাঁদপুর পৌরসভার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক নিউ ট্রাঙ্ক রোড। এটির সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে গত এক বছর পূর্বে। কিন্তু নতুন করে অপরিকল্পিতভাবে ড্রেন নির্মাণ করায় কাজটি বন্ধ হয়ে থাকে। ফলে এই সড়কটি এখন চলাচলের অযোগ্য। নিয়মিত দুর্ভোগে আছেন এই সড়কের আশপাশের বাসিন্দা ও যানবাহন চালকেরা।
স্থানীয় বাসিন্দা নুরুন্নবী বলেন, ‘শহরের কয়েকটি সড়কের অবস্থাই খারাপ। বিশেষ করে নিউ ট্রাঙ্ক রোডের অবস্থা বেশি খারাপ। এই সড়ক কয়েকবার সংস্কার হলেও বছর না পার হতেই পূর্বের অবস্থায় ফিরে যায়। এই সড়কের করুন অবস্থার কারণে যানবাহন চলাচল করতে পারে না। আশা করি এবারের কাজের গুণগতমান বজায় রাখা হবে।’
চাঁদপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী এ.এইচ.এম শামসুদ্দোহা বলেন, ‘শহরের তালতলা সড়ক বিভাগের রাস্তার শেষ সীমানা থেকে ঘোষপাড়া পর্যন্ত রাস্তার কাজ চলমান। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে এক কোটি ২০ লাখ টাকা। আর ট্রাঙ্ক রোডের কাজের সিদ্ধান্ত হয়েছিল শুধুমাত্র কার্পেটিং। কিন্তু বিভিন্ন অংশ টানা বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই কাজ পৌরসভার নিজস্ব অর্থায়নে করা হবে। খুব শিগগিরই এই সড়কের কাজ শুরু হবে।’
কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার হচ্ছে বলে মানতে নারাজ তিনি। পৌরসভার এ কর্মকর্তা বলেন, আমরা নিজেরাই ভাটাতে গিয়ে ইট ক্রয় করে এবং ল্যাবে পরীক্ষা করে কাজ করছি। এই কাজের মান সঠিক না হলে কর্তৃপক্ষ বিল দিবে না। আর কার্পেটিংয়ের কাজ বৃষ্টির মৌসুমে করা যায় না। যে কারণে কাজ বন্ধ। আগামী নভেম্বর থেকে কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি।
চাঁদপুর পৌর প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) একরামুল ছিদ্দিক বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই শহরের করিম পাটওয়ারী সড়ক ও দোকানঘর থেকে লোহারপুল পর্যন্ত সড়কের কাজ শুরু হয়েছে। কুমিল্লা রোডের কাজ শুরু হয়ে মেকাডম চলছে। এক মাস পরে কার্পেটিং শুরু হবে। ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে ট্রাঙ্ক রোডের কাজ শুরু হবে। এছাড়া শহরের কিছু কিছু সড়কে গর্ত হয়ে আছে। সেগুলোর জন্য নির্মাণ সামগ্রী ক্রয় করা হয়েছে এবং সংস্কার কাজ পর্যায়ক্রমে চলবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এসব কাজের জন্য প্রত্যেকটি নির্মাণ সামগ্রী সততার সঙ্গে ক্রয় করা হয়েছে। কাজের গুণগত মান যাতে ভালো থাকে আমি নিজেসহ প্রকৌশলীকে নিয়ে কাজগুলো তত্ত¡াবধান করছি। তারপরেও কাজের ক্ষেত্রে আরও সতর্কতা অবলম্বন করা হবে।’